মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:০৩ পূর্বাহ্ন
এম আই ফারুক আহমেদ, কালের খবর ॥ মোড়ক, দাম ও আর পণ্য-কোথাও তেমন পার্থক্য নেই। দেখতে যেন একই রকম। তবে একটু গভীরভাবে লক্ষ্য করলে বোঝা যায়, যে কোন ব্র্যান্ডের নামের শেষের শব্দে কিংবা দ্বিতীয় শব্দটির মধ্যে ভিন্নতা রয়েছে। আর এভাবেই প্রচলিত শিশুখাদ্য থেকে শুরু করে কসমেটিক্স ও প্রসাধনী সামগ্রী, পানীয় এমন কী জীবন রক্ষাকারী ওষুধও হুবহু নকল হয়ে যাচ্ছে। ভোক্তাদের সঙ্গে প্রতারণা করে নামী ব্র্যান্ডের মোড়কে নকল পণ্য বাজারজাত করছে কিছু অসাধু চক্র। নকল ও মানহীন এসব পণ্য পাড়া মহল্লার মুদি দোকান থেকে শুরু করে নামী দামী সুপারশপেও মিলছে। শুধু সামান্য কিছু মুনাফার জন্য মানহীন, নকল ও ভেজাল পণ্য বিক্রি করেন বিক্রেতারা। পণ্য ভেজালের সঙ্গে ওজন ও পরিমাপেও কম দেয়ায় গত এক মাসে দেড় কোটি টাকারও বেশি জরিমানা করেছে মান নিয়ন্ত্রণ সংস্থা- বিএসটিআই। কিন্তু তারপরও থেমে নেই ভেজালের দৌরাত্ম্য। নকল কারখানার মালিক ও ভেজাল পণ্য বাজারজাতকারীদের বিরুদ্ধে একাধিক সরকারী সংস্থা অভিযান চালালেও কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার কোন দৃষ্টান্ত নেই। ফলে ধরা পড়ার পর জরিমানা ও কারখানা সাময়িকভাবে বন্ধ হলেও কিছুদিন যেতে না যেতেই তারা পুনরায় একই ধরনের অপকর্মে লিপ্ত হচ্ছে। এছাড়া সরকারের বিভিন্ন সংস্থার অভিযানের কারণে অসাধু ব্যবসায়ীরা নকল পণ্য উৎপাদনের জায়গা বদল করছে। জেলা পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়ছে ছোট ছোট কারখানা। পণ্য বিক্রিতে অপরাধীরা পাইকারি বড় বাজারকে টার্গেট করছে। এ ছাড়া অনলাইনে নকল পণ্য বিক্রির অপতৎপরতা বেড়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর বিশ্বে অন্তত ৬০ কোটি মানুষ ভেজাল ও দূষিত খাদ্য গ্রহণের কারণে অসুস্থ হয়। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভেজাল খাদ্যের কারণে প্রতি বছর দেশে কমপক্ষে ৩ লাখ মানুষ ক্যান্সারে, ২ লাখ কিডনি রোগে এবং দেড় লাখ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়া ছাড়াও গর্ভবতী নারীরা ১৫ লাখ বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম দিচ্ছেন। ভেজাল খাদ্য গ্রহণের ফলে দেশে হেপাটাইটিস, কিডনি, লিভার ও ফুসফুসসংশ্লিষ্ট রোগীর সংখ্যাও দিন দিন বেড়ে চলেছে। গত তিন বছরে বিএসটিআই, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর ও র্যাবসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থা অন্তত ৮ হাজার মোবাইল কোর্ট পরিচালনা এবং এসব অভিযানে ভেজালের প্রমাণ পাওয়ায় প্রায় ২৫ হাজার মামলা ও শত কোটি টাকা জরিমানা আদায় হয়েছে।
বাজারে যেসব পণ্য বেশি নকল হয় তার অন্যতম হলো কসমেটিক্স বা প্রসাধনী। জীবন রক্ষাকারী ওষুধও নকল হচ্ছে। মোবাইল হ্যান্ডসেট, অন্য ইলেক্ট্রনিকস পণ্য ও বৈদ্যুতিক তারের মতো পণ্য হরহামেশাই নকল হচ্ছে। নকল হচ্ছে সরকারের রেভিনিউ স্ট্যাম্প। সিগারেটের ট্যাক্স-স্ট্যাম্প ও ব্যান্ডরোল নকল ও পুনর্ব্যবহার করে সরকারকে বড় অঙ্কের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। সরকারী- বেসরকারী পর্যায়ের দায়িত্বশীল ব্যক্তি ও বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, নকল পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত ঠেকানো না গেলে তা একদিকে অর্থনীতিকে আরও ক্ষতির মুখে ফেলবে, তেমনি স্বাস্থ্যঝুঁকিও বাড়বে। এজন্য নকল পণ্য উৎপাদন বন্ধ করতে হবে। অন্যদিকে অপরাধীদের শাস্তি বাড়াতে হবে।
কালের খবরের নিজস্ব অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বিস্কুট, চানাচুর, কফি, শিশুদের চকোলেট, চা, চিপস, আইসক্রিম, বোতলজাত তরল পানীয়, নুডলস, বেভারেজ, ঘি, বাটার অয়েল, সস, মধু, বোতলজাত সয়াবিন তেল, সরিষার তেল, মশার কয়েল, করোনা সুরক্ষা সামগ্রীসহ অনুমোদনহীন নানা পণ্য দেদার বিক্রি হচ্ছে বাজারে। নকলের তালিকায় নতুন পণ্য যুক্ত হওয়ায় স্বাস্থ্যঝুঁকি আরও বেড়েছে। প্রধান খাদ্যপণ্য চালের প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ডের মোড়ক নকল করে নিম্নমানের চাল বাজারে ছাড়ছে একটি চক্র। দেশে রশিদ ব্র্যান্ডের চাল বেশ পরিচিত। তাদের মোড়কে অন্য চাল বিক্রি বন্ধে অধিদফতরে আবেদন করেছে রশিদ এ্যাগ্রো। দেশের নামী ব্র্যান্ডগুলোর মোড়কের আদলের কাছাকাছি নাম দিয়ে এসব পণ্য কিনতে গিয়ে বুঝতেও পারেন না ক্রেতা। পণ্যের গুণগত মান নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বিএসটিআই, ভোক্তা অধিকার ও নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ প্রতিদিনই ভেজালবিরোধী অভিযান চালাচ্ছে। তবে পণ্যের গায়ে কোম্পানির সঠিক ও পূর্ণ ঠিকানা না থাকায় এদেরকে শনাক্ত করতে সমস্যা হচ্ছে সংস্থাগুলোর।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রাণের জুস, রূপচাঁদা সয়াবিন, তিব্বতের কাপড় কাঁচার সাবান, রিন, হুইল, কফিকো ক্যান্ডি, হারপিক, হাকিমপুরী জর্দার মোড়কের আদলে পণ্যের নাম ও উৎপাদক প্রতিষ্ঠানের নাম ছাড়া মোড়ক দেখতে একই রকম। বাজারে গিয়ে প্রতিষ্ঠিত এসব ব্র্যান্ডের পণ্য কিনতে গিয়ে ক্রেতা নকল পণ্যটি তাৎক্ষণিক বুঝতেও পারছেন না। বিএসটিআইয়ের অনুমোদন না থাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তৈরি মানহীন এসব পণ্যে একদিকে ক্রেতা প্রতারণার শিকার হচ্ছে অন্যদিকে যেনতেনভাবে তৈরি এসব পণ্যে ঝুঁকিতে পড়ছে ক্রেতার স্বাস্থ্য। শহরের বাজারের পাশাপাশি মফস্বলের ক্রেতারা এসব পণ্যে প্রতারিত হচ্ছেন। পুরান ঢাকার চকবাজার, বংশাল, যাত্রাবড়ী, কামরাঙ্গীরচর, হাজারীবাগ, মোহাম্মদপুর, আদাবর, গাবতলী, মিরপুর, উত্তরখান, দক্ষিণখান এলাকায় এসব নকল পণ্য উৎপাদনের কারখানা গড়ে উঠেছে।
রাজধানীর বেশ কিছু দোকানে দেখা গেছে, রোমা নামের একটি কোম্পানির প্যাকেটজাত টোস্ট, মটরভাজা, চানাচুরের প্যাকেটের গায়ে বিএসটিআইয়ের লোগো নেই। এ পণ্যগুলো বিক্রিতে লাভও বেশি হয় বলে দোকানিদের ভাষ্য। এছাড়া অনুমোদনহীন মশার কয়েলেও ছেয়ে গেছে বাজার। ‘লামিয়া নিমপাতা’ নামের একটি কয়েলের প্যাকেট বা কার্টনের গায়ে উৎপাদক প্রতিষ্ঠানের কোন নামই নেই। তবে লেখা আছে ট্রেড লাইসেন্স নম্বর, ভ্যাট নম্বর, ফায়ার লাইসেন্স ও টেড মার্ক। কিন্তু বিএসটিআই বা পিএইচপি সনদ নেই। পিএইচপির স্থানে উল্লেখ করা আছে ‘আবেদিত’। যদিও বিএসটিআই বলছে, কোন পণ্যের অনুমোদনের জন্য আবেদন করে তা বাজারজাত করার কোন সুযোগ নেই। বাজারে ভোজ্যতেলের প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ড ‘রূপচাঁদা’। এ ব্র্যান্ডটির বোতলের মোড়কের হুবহু দিয়ে বিক্রি হচ্ছে ‘গৃহিণী’ নামের ব্র্যান্ডের সয়াবিন তেল। পণ্যটির গায়ে বিএসটিআইর লোগো থাকলেও তা আসল কি না তা নিয়ে সন্দেহ খোদ বিক্রিকারী দোকানির। এরপরও কেন বিক্রি করছেন জানতে চাইলে মিরপুর ৬ নম্বর বাজারের মুদি দোকানি আমির হোসেন কালের খবরকে বলেন, ‘এসিআই, রূপচাঁদা কোম্পানি এক লিটার তেলে পাঁচ-ছয় টাকা লাভ দেয়। গৃহিণীর হাফ লিটারেই ছয়-সাত টাকা লাভ। সব কাস্টমার তো আর ব্র্যান্ড বোঝে না। আমরা রাখি লাভের আশায়।’
রাজধানীর মোহাম্মদপুর, গাবতলী, মিরপুর, কামরাঙ্গীরচরসহ বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে ছোট-বড় বেকারি। এসব বেকারি আশপাশের এলাকায় সরবরাহ করছে বিভিন্ন পাউরুটি, বিস্কুট, কেকসহ নানা খাদ্যপণ্য। তবে বেশিরভাগ বেকারির সরবরাহ করা পণ্যের গায়ে উৎপাদনের তারিখ নেই। এ বিষয়ে বিএসটিআইয়ের সহকারী পরিচালক রিয়াজুল হক কালের খবরকে জানান, অবৈধ এমন অনেক কোম্পানি একাধিকবার সিলগালা করা হলেও তারা পুনরায় একই অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। তবে বিএসটিআই বারবার অভিযান চালাচ্ছে। এসব মানহীন পণ্য কেনার বেলায় ক্রেতাদেরও সতর্ক হতে হবে। রিয়াজুল হক বলেন, ‘অভিযান চালানো আমাদের এটা চলমান প্রক্রিয়া। এমনও কোম্পানি আছে, যাদের আমরা দুইবার-তিনবার সিলগালা করেছি। অপরাধীদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। কিন্তু সাজা শেষে তারা যে আবার একই অপরাধ করবে না, এ গ্যারান্টি তো আমরা দিতে পারব না। সে আবার অপরাধ করলে আবার তাকে শাস্তি দেব।’ দেশে পুরনো খ্যাতিসম্পন্ন কোম্পানি তিব্বতের কাপড় কাঁচার সাবানের চাহিদা রয়েছে। ৫৭০ সাবানের আদলে বিক্রি হচ্ছে ‘৬৭০’ নামের সাবান। এছাড়া টয়লেট ধোয়ার অতিপরিচিত হারপিকের আদলে হারপুন, রিন ডিটারজেন্টের আদলে রিমসহ এমন অর্ধশতাধিক অবৈধ পণ্যের ছড়াছড়ি বাজারে। ক্যাডবেরি ব্র্যান্ডের ডেইরি মিল্কের নাম নকল করে অনেকেই চকোলেট উৎপাদন করছে। অবৈধভাবে এই ডেইরি মিল্কের নামে চকোলেট বানানো গ্রিন নাইন নামে একটি কোম্পানির বিপুল পরিমাণ নকল পণ্য জব্দ করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, ডেইরি মিল্ক একমাত্র ক্যাডবেরির নিজস্ব স্বত্ব। অন্যসব ডেইরি মিল্ক না। এ ছাড়া কোন পণ্যের গায়ে যদি কারখানার পুরো ঠিকানা না থাকে তাহলে পণ্যটি ভুয়া কোম্পানির। এদের কারখানাও খুঁজে পাওয়া যায় না।
কনজুমারস এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) তথ্যানুযায়ী, বাজারে প্রতিষ্ঠিত অনেক ব্র্যান্ডের প্রসাধনীর লেবেল ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ নেই। এক জরিপে দেখা গেছে, ৪৫ ভাগ প্রসাধন পণ্যের বিএসটিআইর সনদ নেই, ৭৫ ভাগ পণ্যের উৎপাদক প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা নেই। কনজুমার এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির কালের খবরকে বলেন, খাদ্যপণ্য নকল হওয়া জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি। নকল ও ভেজাল রোধ করতে বাণিজ্য, শিল্প, খাদ্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদসহ সব মন্ত্রণালয় ও সংস্থার সমন্বিত পদক্ষেপ নেয়া উচিত। আর শুধু রমজান ঘিরে তৎপর না হয়ে বছরব্যাপী উৎপাদন থেকে বাজার পর্যায়ে অভিযান জোরদার করতে হবে। পাশাপাশি ভোক্তাদের আরও সচেতন হতে হবে।
নকল ও ভেজাল পণ্যের পাশাপাশি ওজন কম দেয়ার প্রবণতা সাম্প্রতিক সময়ে অনেকাংশেই বেড়েছে। এ নিয়ে ক্রেতাদের অভিযোগেরও শেষ নেই। হাসান (ছদ্মনাম) একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। চাকরির ব্যস্ততার কারণে প্রতিদিন বাজারে যেতে পারেন না। ফলে ছুটির দিন শুক্রবারই ভরসা। বাসার কাছে হওয়ায় সাধারণত তিনি কাওরানবাজার থেকেই বাজারটা সেরে নেন। আড়ত থেকে একটু কম দামে পাওয়া যায় বলে দুই মণের (৮০ কেজি) বস্তা নেন। তারপর একটি রিক্সায় সব বাজার নিয়ে বাসায় চলে আসেন। বাসায় এনে চাল ড্রামে রাখার সময় সন্দেহ হলো। অন্যবার দুই মণ চাল আনলে ড্রাম ভরে যায়, এবার ড্রামের বেশ কিছুটা ফাঁকা। কিন্তু সেটা দোকানদারকে কীভাবে বলবেন? চাল নিয়ে তো বাসায় চলে এসেছেন। বাজারে যে ওজন করাবেন সেটাও মাথায় আসেনি। হাসান ভাবলেন, এক দোকান থেকে এতদিন ধরে চাল কিনছেন। কোনদিন দামাদামী করেননি, সন্দেহও করেননি। আর এই সুযোগে দোকানি এভাবে ঠকাবে? দোকানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা ভাবলেন হাসান। কিন্তু সেটা কীভাবে? রফিক আইনী পদক্ষেপ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। আইনজীবীর কাছে গিয়ে জানতে পারলেন, এ ক্ষেত্রে দণ্ডবিধির ২৬৪, ২৬৫,২৬৬ ও ২৬৭ ধারা অনুসারে নিকটস্থ মুখ্য মহানগর হাকিম ও মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে ফৌজদারি মামলা করা যাবে। ফৌজদারি আদালতে মামলা করার ক্ষেত্রে অভিযোগ দায়ের করতে হয়। সে অভিযোগ শুনে আদালত অভিযোগ থাকা ব্যক্তিকে আদালতে হাজিরের নির্দেশ দিতে পারেন। সে নির্দেশ মোতাবেক হাজির না হলে, সে ক্ষেত্রে বিচারক গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করতে পারেন। দণ্ডবিধির ২৬৪ ধারায় ‘ওজনের জন্য প্রতারণামূলকভাবে মিথ্যা যন্ত্র ব্যবহার’ করার বিষয়ে বলা আছে। এ ধারা অনুসারে কোন ব্যক্তি যদি প্রতারণামূলকভাবে ওজনের জন্য এমন কোন যন্ত্র ব্যবহার করেন, মিথ্যা বলেন- তবে সেই ব্যক্তি এক বছর পর্যন্ত যে কোন মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে অথবা অর্থ দণ্ডে অথবা উভয় দণ্ডেই দণ্ডিত হবেন। দণ্ডিবিধির ২৬৫ ধারা অনুসারে ‘প্রতারণামূলকভাবে মিথ্যা ওজন কিংবা মাপ ব্যবহার’ করার বিষয়ে বলা আছে। এ ধারা অনুসারে, কোন ব্যক্তি যদি প্রতরণামূলকভাবে কোন মিথ্যা ওজন কিংবা দৈর্ঘ্যরে বা ধারণশক্তির মাপকে তা অপেক্ষা ভিন্ন ওজন কিংবা দৈর্ঘ্য বা ধারণশক্তির মাপ হিসেবে ব্যবহার করেন, তবে সেই ব্যক্তি এক বছর পর্যন্ত যে কোন মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে অথবা অর্থ দণ্ডে অথবা উভয় দণ্ডেই দণ্ডিত হবেন।
দণ্ডবিধির ২৬৬ ধারা অনুসারে, ‘মিথ্যা ওজন কিংবা মাপ করা’ বিষয়ে বলা আছে। এ ধারা অনুসারে, কোন ব্যক্তি যদি এমন কোন ওজন, পরিমাপ যন্ত্র বা বাটখারা কিংবা দৈর্ঘ্য বা ধারণক্ষমতা মাপবার যন্ত্র রাখে, যা মিথ্যা বলে সে জানে এবং উহা যাতে প্রতারণামূলকভাবে ব্যবহৃত হতে পারে তার জন্যই রাখে, তবে সেই ব্যক্তির এক বছর পর্যন্ত যে কোন মেয়াদের সশ্রম অথবা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে, অথবা অর্থ দণ্ডে, অথবা উভয় দণ্ডেই দণ্ডিত হবেন। দণ্ডিবিধির ২৬৬ ধারা অনুসারে, ‘মিথ্যা বাটখারা কিংবা মাপ তৈরি কিংবা বিক্রয় করা’ বিষয়ে বলা আছে। এ ধারা অনুসারে, কোন ব্যক্তি যদি এমন কোন ওজন বা বাটখারা কিংবা দৈর্ঘ্য বা ধারণশক্তির পরিমাপ যন্ত্র তৈরি করেন, বিক্রয় করেন বা লেনদেন করেন, যা মিথ্যা বলে তিনি জানেন এবং উহা যাতে সত্য বলে ব্যবহার করা যায়, সে উদ্দেশ্যেই তা করেন অথবা উহা সত্য বলে ব্যবহৃত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, তাহলে যে কোন মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে অথবা উভয় দণ্ডেই দণ্ডিত হবেন।
অনলাইনেও নকল পণ্য ॥ অনলাইনে পণ্য বেচাকেনায় বাড়ছে প্রতারণার ঘটনা। আসল পণ্যের ছবি দেখিয়ে নকল পণ্য গছিয়ে দেয়া, বিকাশে অগ্রিম টাকা নিয়ে পণ্য না পাঠানোসহ প্রতারণার নানা অভিযোগ উঠছে অনেক নামসর্বস্ব ই-কমার্স ‘প্রতিষ্ঠানের’ বিরুদ্ধে। সবচেয়ে বেশি প্রতারণার ঘটনা ঘটছে ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তৈরি করা ব্যবসায়ী পেজগুলোতে। অনেকে ফেসবুকে পেজ খুলে দামী পণ্যের ছবি দিয়ে নামমাত্র মূল্যে বিক্রির বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। সঙ্গে বলা হচ্ছে ‘স্টক থাকা পর্যন্ত অফারটি চলবে’। পণ্যটি পেতে মোট মূল্যের একটি অংশ বা কুরিয়ার চার্জ অগ্রিম বিকাশে পাঠানোর অনুরোধ করা হচ্ছে। কিন্তু, টাকা পাঠানোর পর আর দেয়া হচ্ছে না পণ্য। এমনকি ক্রেতা যাতে ওই ফেসবুক পেজে গিয়ে অভিযোগ দিতে না পারেন সেজন্য তাকে বøক করে দেয়া হচ্ছে। সম্প্রতি জারা কালেকশন নামের একটি ফেসবুক পেইজ থেকে একটি থ্রিপিস অর্ডার করেন কনিকা আলী। কুরিয়ার চার্জসহ ২১০০ টাকা বিকাশে পরিশোধ করেন তিনি। কুরিয়ারে আসা পার্সেলে হাতে নিয়ে হতবাক তিনি। দেখেন পুরনো ও কমদামী থ্রি পিস পাঠানো হয়েছে তাকে। তিনি কালের খবরকে জানান, ইনবক্সে অভিযোগ জানানোর পরই আমাকে ফেসবুক থেকে বøক করে দেয় জারা কালেকশন। ফেসবুক পেজে দেয়া মোবাইল ফোন নম্বরটিও বন্ধ। বাধ্য হয়ে ভোক্তা অধিকারে অভিযোগ করেছেন কনিকা।
মান নিয়ন্ত্রণে একমাসে দেড় কোটি টাকার বেশি জরিমানা ॥ অনুমোদন ছাড়া মোড়কে মানচিহ্ন ব্যবহার এবং ওজনে কম দেয়াসহ বিভিন্ন অনিয়মের কারণে গত মে মাসে ২০৯টি প্রতিষ্ঠানকে এক কোটি ৬০ লাখ টাকা জরিমানা করেছে মান নিয়ন্ত্রণ সংস্থা- বিএসটিআই। সারা দেশের পেট্রোল পাম্প, মিষ্টির দোকানসহ বিভিন্ন ভোগ্য পণ্যের খুচরা দোকানে নিয়মিত এ অভিযান চলে। যেসব প্রতিষ্ঠানে বিএসটিআই’র মানসনদ বাধ্যতামূলক সেখানেও অভিযান চালানো হয়। সনদের মেয়াদ ফুরানোর কারণেও অনেক প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে।
এছাড়া অবৈধভাবে বিএসটিআইর অনুমোদন ছাড়া পণ্যের মোড়কে মানচিহ্ন ব্যবহার করায় গত মে মাসে ৭৫টি ভ্রাম্যমাণ আদালত ১৩০টি প্রতিষ্ঠানকে ১ কোটি ৪১ লাখ টাকা জরিমানা করেছে। এরমধ্যে একটি প্রতিষ্ঠানকে সিলগালা এবং ৫ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।